home  |  articles  |  who we are  |  contact us

Shahbaz Center
Center for Sufism & Islamic Studies

 

Join Our Discussion Forum: 
WeLoveAllah

Helpful Links:
www.zaytuna.org
www.masud.co.uk
www.sunnipath.com
www.therevival.co.uk
www.livingislam.org
www.radiodarvish.com
 

 

 

 

 

 

 

 

  

Maulana Shahbaz Muhammad Bhagalpuri

নহে এ সম্মান বাহুবলে অর্জিত
যদি না দয়া করেন খোদা মেহেরবান

উপমহাদেশে ইলমে দ্বীন ও বিশেষতইলমুল হাদীস এর প্রচার প্রসারে যারা অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের মধ্যে সুলতানুল আরেফিন সায়্যিদ শাহবাজ মুহাম্মাদ ভাগলপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক মহান ও চির অবিস্মরণীয় নাম । হুযুর সুলতানুল আরেফিন ইলমে দ্বীনের পাশাপাশি বেলায়াত গগনের মধ্য দিবসের সূর্য হিসেবে আউলিয়ায়ে কিরামের মাঝে পরিচিত । তথাপি, ইলমে যাহিরী ও ইলমে বাতিনী উভয় অঙ্গনে সুলতানুল আরেফিন এক অমর ব্যক্তিত্য হিসেবে যুগ যুগ যাবৎ স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। নিম্নে, সংক্ষেপেউনার জীবনালোচনা করার প্রয়াস করছি।

জন্ম- হুযুর সুলতানুল আরেফিন ৯৫৬ হিজরী মোতাবেক ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দে সেলিম শাহ সুরীর যুগে ভারতের গয়া নামক জেলার “দেওরা” গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর সম্মানিত পিতার নাম হযরত সায়্যিদ হাজী খাত্তাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং মাতার নাম বিবি মাজিদা রহমাতুল্লাহি আলাইহা।দাদাজান হযরত হাজী সায়্যিদ খাইরুদ্দীন হুসাইনি বুখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বুখারার জারোহা নামক শহরের বাসিন্দা ছিলেন। বনু আব্বাস এর শাষনামলে যখন খান্দানে বনু ফাতিমার ওপর অমানবিক নির্যাতন আরম্ভ হল, তখন তিনি তৎকালীন শাষকদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে হিজরত করার উদ্দেশ্যে ৯২০-৯২৭ হিজরীর মাঝামাঝি সময়ে বুখারা ত্যাগ করে সপরিবারে মক্কা শরীফের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং সেখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন, এবং যখন শেষবারের ন্যায় হজ্জ পালন করেন তখন তাঁর সাথে পুত্র সায়্যিদ খাত্তাব ও ছিলেন। অতঃপর, যিয়ারতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এবং যখন রওযায়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে উপস্থিত হয়ে সালাম পেশ করেন তখন রওযায়ে আতহার থেকে সালামের জওয়াব শুনতে পান এবং পাশাপাশি এ সুসংবাদও শুনতে পান, যে “তোমার পুত্র সায়্যিদ মুহাম্মাদ খাত্তাব এর ঔরসে একটি নূর আমানত রয়েছে যে আমার শরীয়তের সুরক্ষক, তরিকতের বাদশাহ এবং মিল্লাতে হানিফ এর ইমাম হবে। যখন সে জন্ম গ্রহন করবে তখন তাঁর নাম “শাহবাজ মুহাম্মাদ” রাখবে”, এর কিছুদিন পর মক্কা শরীফে সুলতানুল আরেফিন এর দাদাজান ও দাদীজান এর ইন্তিকাল হয় এবং উভয়কেই সাফা পাহাড়ের নিকট অবস্থিত জাবালে আবু কুবাইস এর পাদদেশে দাফন করা হয়।

শৈশব- বংশীয় রেওয়াজ অনুযায়ী চার বছর চার মাস চার দিন বয়সে হযরত সুলতানুল আরেফিনকে বিসমিল্লাহখানী তথা পড়ালেখার হাতেখড়ির জন্য অত্র এলাকার এক মহান বু্যুর্গের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এবংএরপর থেকেই তিনি যথারীতি ইলমে দ্বীন হাসিলে নিয়োজিত হয়ে পড়েন। ছোটবেলা থেকেই তিনি অন্য দশটি ছেলে থেকে ছিলেন একেবারেই আলাদা। খেলাধুলার প্রতি তাঁর বিশেষ কোন আগ্রহ ছিলনা, এবং এ সময় থেকেই তাঁর কথাবার্তা ও ওঠাবসায় অন্যান্য শিশুদের তুলনায় বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ছোটকাল হতেই তিনি ছিলেন সততা , ধৈর্য,আনুগত্য, আদব ও সহিষ্ণুতার প্রতীক । বাল্যকাল হতেই তিনি সর্বদা তাঁর সহপাঠিদের খোজখবর নিতেন।

ছাত্রজীবন- মক্তব শেষ করার পর স্বীয় পিতার নিকট হতেই প্রাথমিক শিক্ষা হাসিল করেন। প্রাথমিক পর্যায়েই তিনি প্রায় ১৭টি বিষয়ের ওপর পারদর্শিতা লাভ করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নাহভ, সরফ, মানতিক, ফালসাফা, ইলমে মাআনী, ইলমে বায়ান, ইলমে তাফসীর, উসুলে তাফসীর, ইলমে হাদীস, উসুলে হাদীস, জ্যোতির্বিদ্যা, প্রকৌশল বিদ্যা ইত্যাদি । এ ছাড়াও তৎকালীন সময়ের প্রসিদ্ধ আলিম ও বিচারপতি শাহ মুহাম্মাদ আব্বাস দেওরাভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট হতে ইলমে ফিকহ সহ অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন।

উচ্চশিক্ষা হাসিল- উচ্চশিক্ষা হাসিল করার উদ্দেশ্যে তিনি হিন্দুস্তানের তৎকালীন রাজধানী ও জ্ঞানচর্চার মূলকেন্দ্র জৌনপুরে চলে আসেন এবং সেখানে অত্যন্ত দুরূহ ও কঠিন সময় অতিবাহিত করেন। খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করেন । কথিত রয়েছে, তাঁর মাদরাসায় না থাকার ব্যবস্থা ছিল না রাত জেগে পড়ার। দিনভর নিজ শিক্ষকের সান্নিধ্যে থাকতেন এবং রাতভর এক রুটি ওয়ালার দোকানে এসে পাহাড়াদার হিসেবে থাকতেন, এ শর্তে যে দোকানদার দোকান বন্ধ করার পর দোকানের চেরাগ প্রজ্বলিত থাকবে, যাতে করে সেই চেরাগের আলোতে বসে তিনি পড়ালেখা করতে পারেন। সেখান থেকে পড়ালেখা শেষ করে তিনি কান্নৌজ চলে আসেন এবং সেখানেও বড় বড় উলামায়ে কিরাম হতে ইলমে দ্বীন অর্জন করেন। ইলমপিপাসু সুলতানুল আরিফিন শুধুমাত্র হিন্দুস্তানেই ইলম অর্জন করে ক্ষান্ত হননি এবং তৃপ্তি লাভ করেননি বরং ইলমপিপাসা নিবারণ করার উদ্দেশ্যে ৯৭০ হিজরীতে হিজাযে মুকাদ্দাসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সফরের যাবতীয় মুসিবত ও অবর্নণীয় ক্লেশউপেক্ষা করে মক্কা শরীফে আগমন করেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও কা’বা শরীফের শাফিঈ মাজহাবীদের তৎকালীন ইমামশিহাবুদ্দিন আহমাদ ইবনু হাজার আল হাইতামি আল মাক্কি আল শাফিয়ি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর হাদিসের দারসে একাধারে ৩ বছর অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর আল্লামা ইবনু হাজার হুযুর সুলতানুল আরিফিনকে সনদে হাদীস দান করেন।

মক্কা শরীফ থেকে প্রত্যাবর্তন- দীর্ঘ ৩ বছর ইলমে হাদীস হাসিল করার পর তিনি মক্কা মুয়াযযামায় হজ্জ পালন করেন এবং সেখান থেকে ৯৭৫ হিজরীতে রওযায়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে পবিত্র মদিনায়ে মুনাউয়ারায়হাজির হন। অতঃপর সেখানে দয়াল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর রওযায়ে আতহারে সালাতো সালাম পেশ করেন। সেখান থেকে বিদায় নেয়ার পর হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর অন্তরে মাওলায়ে কায়েনাত হযরত আলিয়্যুল মুরতাযা ও সায়্যিদুশ শুহাদা ইমা্ম এ আলী মাকাম ইমাম হুসাইন আলাইহিমাস সালাম এর মাযারে পাক যিয়ারাত করার গভীর আকাঙ্ক্ষার উদ্রেক হয়, সুতরাং, তিনি নাজাফে আশরাফ এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং সেখান থেকে কারবালায়ে মুয়াল্লা, কাযিমাইন (ইমাম মুসা কাযিম আলাইহিস সালাম ও ইমাম মুহাম্মাদ জাউয়াদ আল তাকী আলাইহিস সালাম এর মাযার শরীফ) হয়েহিন্দুস্তানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে এক অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পায়, হুযুর সুলতানুল আরিফিন বর্ণনা করেন, “যখন আমি আফগানিস্তানের হেরাত নামক স্থান এর গভীর জঙ্গল এর মাঝ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাবু হয়ে পড়েছিলাম, এবং আশেপাশে কোন জনবসতিও দেখতে পাচ্ছিলাম না। এমন সময় দেখতে পেলাম রাস্তার শেষপ্রান্তে একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছেন যারচেহারা কাপড় দ্বারা আবৃত ছিল, ক্রমেই তিনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন এবং একটি খুরমা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “এটা খাও” আমি খেয়ে নিলাম, তিনি আবার খুরমা দিলেন, আমি আবার খেয়ে নিলাম তিনি তৃতীয় বারের ন্যায় খুরমা দিয়ে চলে গেলেন এবং আমি তা খেয়ে চিন্তা করতে লাগলাম কে এই পরিচয়গোপনকারী ব্যক্তি ? এবং এই খুরমাগুলো কেমন ? এ কথাগুলো চিন্তাই করছিলাম এমন সময় আমি হঠাৎ দেখতে পাই, তিনি পূনরায় আমার দিকে ফিরে আসছেন এবং এসে চেহারা অনাবৃত করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“فرزندم٬غممخور٬منجدشماعليام”

অর্থাৎ, আমার প্রিয় সন্তান, তুমি ভয় করোনা, আমি তোমার দাদা (পূর্বপুরুষ) আলী, প্রথম খুরমাটি শরীয়ত, দ্বিতীয় খুরমাটি মা’রিফাত এবং তৃতীয় খুরমাটি হাকিকাত।

ভাগলপুরে আগমন ও মাদরাসা নির্মাণ- হুযুর সুলতানুল আরিফিন মুঘল সম্রাট জালালুদ্দিন মুহাম্মাদ আকবর এর শাষনামলে ৯৮৫ হিজরীতে ভাগলপুরে আগমন করেন, তৎকালীন সময়ে ভাগলপুর ছিল একটি ছোট ও অপিরিচিত গ্রাম ।তিনি সেখানে একটি মাদরাসাকায়েম করেন, নাতিদীর্ঘ সময়ে যাএকটি আজিমুশশান বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ ধারন করে এবং যার ইতিহাস মুসলিম ও অমুসলিম ইতিহাসবিদগণ স্ব স্ব ইতিহাসগ্রন্থে অকপটে বর্ণনা করেন এবং এর খ্যাতি উপমহাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে যায়। অল্প সময়েই তালিবে ইলমদের পদাচরণে মুখরিত হয়ে উঠে ভাগলপুরের যমীন। জ্ঞান বিতরণেরকেন্দ্র হিসেবে ভাগলপুর নিজ পরিচয় পরিবহণ করতে আরম্ভ করে, সুলতানুল আরিফিন এর একেকটি দারসে পাঁচ শতাধিক ছাত্র অংশগ্রহণ করতেন ফলে, প্রায় সময়ই ছাত্রদের আধিক্যের কারণেমাদরাসায় ছাত্রদের থাকার ব্যবস্থা করা দূষ্কর হয়ে পড়তো ।ছাত্রদের মাঝে অধিকাংশই মুলতান, লাহোর, দিল্লী, পাঞ্জাব, সেরহিন্দ, বিহার, বাঙ্গাল, উড়িষ্যা, জৌনপুর, কান্নৌজ, গাজীপুর ইত্যাদি স্থান থেকে আগমন করে ইলমে শরীয়ত ও মা’রিফাত হাসিল করে আত্মশুদ্ধি করতেন । সুলতানুল আরিফিন তাঁর মাদরাসায় হিফযুল কুরআন, ইলমে তাজভীদ, ইলমে কিরাআত, উলুমুল কুরআন, ইলমে তাফসীর, উসুলে তাফসীর, ইলমে হাদিস, উসুলে হাদিস, ইসনাদে হাদিস, আসমাউর রিজাল, জারহ ও তা’দিল, তাখরিজে হাদিস, লুগাতে হাদিস, ফিকহ, উসুলে ফিকহ, রাসমুল মুফতী, ইলমুল আকাঈদ, ইলমুল মুনাযারাহ, ইলমুল ফারায়েয, সিয়ার, ইলমুল কালাম, ইলমুল মাআনী, ইলমুল বাদী’, ইলমুল বায়ান, ইলমুল মানতিক, ফালসাফাহ, ইলমুল হিকমাত, ইলমুল হাইআত, ইলমুল আখলাক, তারীখ, ইলমুল আনসাব, লুগাত, সাহিত্য, হিসাববিজ্ঞান, জ্যোতিরবিদ্যা, তাওরকাবিদ্যা, ইলমে তা’বীর, ইলমে বালাগাত, ইলমে সারফ, ইলমে নাহভ, প্রকৌশলবিদ্যা, সুলুক ও তাসাউফ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দিতেন ।
কথিত রয়েছে, প্রাথমিক দিকে হুযুর সুলতানুল আরিফিন নিজেই, সমস্ত বিষয় এর পাঠদান করতেন, তবে পরবর্তী সময়ে অধিকহারে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি ক্লাসগুলো নেয়ার দায়িত্য তাঁর শাগিরদ, খাদিম, খলীফা ও সন্তানগণের মাঝে বন্টন করে দেন ।হুযুর সুলতানুল আরিফিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট ছিল এই যে, তিনি তাঁর শিষ্যদের পাঠদান করে শুধু কর্মযোগ্যই বানাতেন না বরং তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় দ্বীনের খিদমতের কাজেনিয়োজিতও করে দিতেন, যেমনটা আমরা দেখতে পাই ভাগলপুর শহর ও এর আশপাশের এলাকা সমূহের অধিকাংশ মসজিদ, মাদরাসা ও খানকাহসমূহ হুযুর সুলতানুল আরিফিনের আউলাদগণ, শিষ্যগণ ও খলিফাগণের নামে নামকরণকৃত।

ইলমুল হাদিসের চর্চা- হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর সহিত ইলমুল হাদিসের এত নিবিড় সম্পর্ক ছিল যা কল্পনাতীত। তিনি ইলমুল হাদিসের চর্চায় দিনরাত মগ্ন থাকতেন। হাদিসে পাকের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা তাঁর নিত্যদিনের কাজ ছিল, কিন্তু আফসোস এর বিষয় হল অধিকাংশ পান্ডুলিপিই হাড়িয়ে গিয়েছে তবে সুলতানুল আরিফিন এর সহস্তে লিখিত একটি কিতাব “সিত্তিন শরীফ” নামে প্রকাশিত হয়েছে । যে কিতাবে তিনি ৬০টি হাদিসে পাক সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম হতে মুরাকাবার মাধ্যমে শ্রবণ করে লিপিবদ্ধ করেছেন ।

কথিত আছে, একদা তিনি হাদিসের কিতাব মিশকাত শরীফের দারস দিচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় যখন তিনিالحياءشعبةمنالايمانএর হাদিস পড়াতে আরম্ভ করেন, তখন হযরতের নিকট যে ছাপা ছিল, তাতে “মিন” এর স্থলে “মিন”ই লেখা ছিল তবে ছাত্রদের কিতাবের ছাপায় “মিন” এর স্থলে “হিয়া” লেখা ছিল, এজন্যে তারা বারংবার মিন এর স্থলে হিয়া পড়ছিলেন। সুলতানুল আরিফিন এমন অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের মাঝে কি এমন কেউ রয়েছে যে সরাসরি দয়াল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট হতে সঠিক লেখাটি জানতে পারবে ?” তখন ছাত্রগণ সম্মিলিত কন্ঠে উত্তর দিলেন “ হে শাইখ, এ মর্যাদা আপনার জন্যই নির্দিষ্ট। এরপর সুলতানুল আরিফিন কিছুক্ষণ নিরব থেকে দীর্ঘ মুরাকাবায় মগ্ন হন, কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে , তিনি অর্ধদিবস যাবৎ মুরাকাবায় মগ্ন থেকে পুরো মিশকাত শরীফ নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট হতে শুদ্ধ করিয়ে নেন।

তাকওয়া ও পরহেজগারী- হুজুর সুলতানুল আরিফিন আহকামে শরীয়ত ও সুন্নাতে নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম পালনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। কোন ব্যক্তি তাঁর সামনে সুন্নাত ত্যাগ করে অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করলে হযরত কক্ষনও তাতে বাধা দান করতেন, এবং এ ব্যাপারে তিনি আপন বা পরের কোন খেয়াল করতেন না।

হুযুর সুলতানুল আরিফিনের দরবারে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আগমন- বাদশাহ জাহাঙ্গীর এর মৃত্যুর সময় যখন ঘনিয়ে এলো, তখন বাদশাহ শাহজাহানের সৎ মা নুরজাহান শাহজাহানের বিরুদ্ধে সম্রাট জাহাঙ্গীর কে উস্কানিমূলক কথা বলে শাহজাহানের বিরুদ্ধে ক্ষুন্ধ করে তোলেন যাতে করে তাঁর মৃত্যুর পর সম্রাট শাহজাহানের পরিবর্তে তাঁর পূর্বের স্বামী শের আফগানের সন্তানকে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী বানানো হয়। শাহজাহানের বিরুদ্ধে তাঁর সৎ মায়ের এ চক্রান্তের ফলে শাহজাহান তাঁর ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন এবং এমতাবস্থায় নিরুপায় হয়ে ১০৩৫ হিজরীতে শাহজাহানরাজমহল নামক স্থান হয়ে ভাগলপুরের পূন্যভূমিতে হুযুর সুলতানুল আরিফিনের খিদমতে উপস্থিত হন। অতঃপর অত্যন্ত আদব ও বিনয়ের সহিত হযরতের দরবারে সমস্ত অবস্থা বর্ণনাপূর্বক আরজি পেশ করলেন এবং বললেন, “ যদি আপনার দুআ ইচ্ছা করে , তবে আমাকে সিংহাসন ও মুকুট দান করতে পারে এবং বাদশাহে পরিণত করতে পারে, নতুবা এ ছাড়া আর কোন তদবীর দেখছিনা”। জবাবে হুযুর ইরশাদ করলেন, “তুমি চাও, যে তোমাকে হিদুস্তানের বাদশাহী দান করা হোক, অথচ তোমার জুব্বার আঁচলজমিন স্পর্শ করছে যা কিনা শরীয়তে মুস্তাফাভী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর বরখিলাফ, বাদশাহ যখন শরীয়ত এর আনুগত্য করেনা, তখন তাঁর অধিনস্তরা শরীয়তের বিরুদ্ধে চলে যায়”। হুযুরের এ হুকুম শোনার পরপরই শাহজাহান তাঁর জুব্বার আঁচল ছিড়ে ফেলে দিতে লাগলো, এ দৃশ্য দেখা মাত্র হুযুর ইরশাদ করলেন, “কাপড় ফেলে দিয়ে অপচয় করোনা বরং, এটা ছাত্রদের দিয়ে দাও, তারা এটা দিয়ে টুপি বানিয়ে নেবে”, শাহজাহান যখন হুযুরের আদেশ যাথাযথভাবে পালন করলো তখন তাঁর শরীয়তের আনুগত্য হুযুরকে আনন্দিত করলো, এরপর শাহজাহান হুযুরকে জিজ্ঞেস করলেন “আমার ভাগ্যে কি হিন্দুস্তানের সিংহাসন রয়েছে?”, তখন হুযুর হ্যা সূচক উত্তর দিলেন, এবং পরবর্তীতে সে শাহজাহানই হিন্দুস্তানের সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আরোহন করলেন। শাহজাহান যখন পিতার স্থলাভিষিক্ত হলেন তখন তিনি তাঁর খাস দূতকে দিয়ে চিঠি ও সুবিশাল জাইগীর (জমিনের পরিমাণ) হাদিয়া স্বরূপ হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর দরবারে পাঠালেন, বাদশাহী লাভ করার সুসংবাদ দিলেন, দু’আর দরখাস্ত করলেন এবং এরই পাশাপাশি সম্রাট শাহজাহান পুনরায় হুযুর সুলতানুল আরিফিনের দরবারে হাজির হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলেন । দূত যখন হযরতের দরবারে হাজির হলো, হযরত তখন হুক্কা খাচ্ছিলেন, দূত সালাম দেয়ার পর হুযুরের নিকট সম্রাটের চিঠি ও জাইগীর এর দলীল পেশ করলো, চিঠি পাঠরত অবস্থাতেই হযরতের চেহারায় রাগ ও ক্রোধের আলামত প্রকাশ পেলো। এবং সাথে সাথে জাইগীরের সনদ্গুলোকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললেন এবং কাগজের টুকরোগুলোকে হুক্কার ওপরে থাকা কয়লার মাঝে রেখে দিলেন, যা নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।
এরপর হযরত চিঠির জবাব লিখতে আরম্ভ করলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হাজারো শুকরিয়া ও মেহেরবানী, যিনি এই ফকিরের দু’আ কবুল করেছেন এবং তোমাকে শাহী মসনদ দান করেছেন, সম্মান ও লাঞ্ছনা সবই তাঁর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত কোন কিছুই হয়না। তোমার উচিৎ অধিক হারে খোদা তাআলার শুকরিয়া আদায় করা এবং তাঁর মাখলুকের দেখাশোনায় মনোনিবেশকরা, সমস্ত কাজে ইনসাফ ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা । তুমি, আমি ফকিরের সাথে পুনরায় সাক্ষাৎ করার আশা ব্যাক্ত করেছো, তাই জেনে নাও যে, প্রথমবার যখন তুমি আমার সান্নিধ্যে এসেছিলে তখন তুমি একজন করুনাকামী শাহজাদা রূপে উপস্থিত হয়েছিলে, তাই আমি ফকিরের সহিত তোমার সাক্ষাৎ বৈধ ছিল। আর এখন বাদশাহীর আসনে সমাসীন, অতএব, তোমার সাথে আমার সাক্ষাত করা অবৈধ । উলামাগণ আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুসসালাম এর উত্তরাধিকারী, উলামাগন রাজা বাদশাহদের সহিত মেলামেশা করেননা। এবং তুমি জাইগিরের (জমিনের) দলীল কেনো পাঠালে ? তোমার এবং আমার রিযিকদাতা কি ভিন্ন ? যখন বিষয়টি এমন নয় । রাযযাক, যিনি তোমাকে সিংহাসনের ওপর রিযিক পাঠান তিনিই আমাকে ছেড়া চাটাই এর ওপর রিযিক পাঠান। আর হ্যা, তুমি আমার নিকট দুআয়ে খায়েরের আবেদন করেছো এবং উলামায়ে কিরাম ও সালেহীন বান্দাগণের উচিৎ, তারা যেন ন্যায়পরায়ন বাদশাহের কল্যাণের স্বার্থে দুআ করেন। অতএব, তোমারও কল্যাণে আমার দু’আ থাকবে তবে স্মরণ রেখো, এই দু’আ ততক্ষন পর্যন্ত জারী থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তোমার মাঝে ইনসাফ ও ন্যায়পরায়নতার গুনাগুন বিদ্যমান থাকবে।

হুযুর সুলতানুল আরিফিন এবং সুন্নাতের অনুসরণ- হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর দৈনন্দিন জীবন এর প্রতিটি মুহূর্ত কুরআনে মাজীদ এর আয়াত “যে ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করলো, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর আনুগত্য করলো” এর জলজ্যান্ত উদাহরন ছিল, তাঁর যিন্দেগীর প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাস সুন্নাতের আনুগত্য, ইশকে ইলাহী, ইশকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রঙে রঙিন ছিল । তিনি “ওয়াহদাতুল উজুদ” এ বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি নিজের যিন্দেগী অর্থাৎ জীবনযাপন এবং বন্দেগী তথা ইবাদতে মহান আল্লাহ তাআলার রেযামন্দি ব্যতীত আর কোন কিছুর তোয়াক্কা করেননি। তাঁর চালচলন, ওঠা বসা, খাওয়া দাওয়া প্রতিটি কাজই সুন্নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন্ত নিদর্শন ছিল, নিম্নে তার কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হল।

পোশাক- হুযুর সুলতানুল আরিফিন পিরাহান (কুর্তা), তাহবন্দ (লুঙ্গী), ও পাঁচকোনা বিশিষ্ট টুপি পরিধান করতেন। পাঠদান ও ইমামতি করা কালীন সময়ে জুব্বা বা আবা পরিধান করতেন।যৌবনে যেরূপ এক ভাজবিশিষ্ট সুতি কুর্তা পরিধান করতেন তদ্রূপ বৃদ্ধ বয়সেও এক ভাজবিশিষ্ট সুতি কুর্তা পরিধান করতেন, ইশকে ইলাহি ও ইশকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর তাজাল্লী সর্বদা তাঁর দেহকে আবৃত করে রাখতো এমনকি প্রচন্ডশীতের মৌসুমেও তাঁর হাত মোবারকে হাত পাখা থাকতো, যার দ্বারা তিনি নিজেকে বাতাস করতেন।

বিছানা- চারপায়া বিশিষ্ট তোষকবিহীন খাটের ওপর ঘুমাতেন যা মূলত দড়ি দ্বারা বুনন করা ছিল। অধিকাংশ সময় তার মলীন শরীরে দড়ির দাগ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠতো, এছাড়াও অধিকাংশ সময় তিনি সরাসরি জমিনের ওপর শুয়ে আরাম করতেন। তাকে যখনই নরম তোষক বা গদি ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হতো, তখন তিনি বলতেন, “কে জানে ? নবীয়েপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কি কখনোও এতো নরম তোষক বা গদি ব্যবহার করেছেন কিনা, যদি তিনি এরূপ না করে থাকেন তবে এটা বিদ’আত হবে।”। তিনি যখন শয়ন করতেন তখন নিজ দেহকে এমনভাবে গুটিয়ে রাখতেন যেন উপর থেকে দেখে মনে হতো আরবী ভাষায় “মুহাম্মাদ” লেখা আছে।

খাদ্যাভ্যাস- হুযুর সুলতানুল আরিফিন অত্যন্ত কম খাদ্য গ্রহনে অভ্যস্ত ছিলেন । কখনও পেট পুরে খাবার খাননি, অধিকাংশ সময় রোজা রাখতেন যৌবনের আরম্ভ থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত সপ্তাহে শুধু একদিন রোযা ত্যাগ করতেন, বাকি ছয় দিন রোযার হালতে থাকতেন, এবং প্রায়
চল্লিশ বছর যাবৎ এ আমল করেছেন। শেষ বয়সে পরিবারবর্গ ও শিষ্যগনের পিড়াপীড়িতে সপ্তাহে দুই দিন খাবার গ্রহন করতেন বাকি পাঁচ দিনরোযা রাখতেন। তাঁর খাবারের তালিকায় চিকন চালের ভাত, আটার রুটি, মোরগের গোশত, ঘি এবং দই থাকতো এবং এ পাঁচটি খাবারের সমন্বয়কে “মাকতাই” বলা হতো। হুযুর এ পাঁচটি খাদ্য অত্যন্ত পছন্দ করতেন ।

হুযুর সুলতানুল আরিফিনের কারামাত- হুযুর সুলতানুল আরিফিনের দরবার সমস্ত মাখলুকের আশ্রয়স্থল ছিলো। যেখানে সব ধরনের, সব জাতের, সব রঙের, সব বর্ণের মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকতো। এমনকি সেখানে অন্যান্য ধর্মগুরুদের ও বিচরন দেখা যেত । একদিন হযরতের দরবারে এক হিন্দু যোগী আসলো এবং হুযুরকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো “ফানা কি এবং বাকা কি?” এর বাস্তব উদাহরণ আপনি আমাদের সম্মুক্ষে পেশ করুন। যোগীর মুখে এ কথা শুনে হযরত ইরশাদ করলেন, ‘চলে যাও, দূর হয়ে যাও, এটা রঙ তামাশার স্থান নয়, এবং ফানা ও বাকা কোন খেলার বস্তু নয়, যখন যেখানে ইচ্ছা শুরু করে দিলাম”। উত্তরে যোগী বললো, “আপনাদের সূফীদের নিকট তো ফানা ও বাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অথচ আপনি তা দেখাতে টালবাহানা করছেন। তবে যেনে রাখুন, আমিও ফানা ও বাকা হাসিল করেছি, তবে তা ৩৬ বছরের সাধনার ফলে”, তখন হযরত ইরশাদ করলেন, “তাহলে দেরী কেনো ? এক্ষুনি দেখাও”। যোগীএ কথা শুনে সামনে থাকা শুকনো হাউজে নেমে পড়লেন এবং চোখ বন্ধ করে কিছু একটা জপতে লাগলো, ঘন্টাখানেক পর দেখা গেলো যে তাঁর অস্তিত্ব ধীরে ধীরে বিলিন হয়ে যাচ্ছে এবং একসময়ে তা পানিতে পরিণত হয়ে গেলো। এ অবস্থা দেখে হযরত তাঁর এক খাদিমকে সেখান থেকে এক শিশি পানি ভরে রেখে দিতে বললেন, এর কিছুক্ষণ পর যোগী আবার তাঁর পূর্বাবস্থায় ফিরে এলো এবং হাত ঝাড়তে ঝাড়তে হাউজ থেকে বেড়িয়ে এলো এবং বললো, “দেখলেন আমার ক্ষমতা?” হযরত মুচকি হেসে বললেন “দেখেছি”, এরপর হযরত খাদিমগণকে ভালোভাবে হাউজটি ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন এবং তিনি স্বয়ং হাউজটিতে নেমে পড়লেন, কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন এবং এর পর “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর একটি আওয়াজ আসলো এবং দেখতে দেখতেই হযরতের দেহ পানিতে বিলীন হয়ে গেলো এবং পানির প্রতিটি বিন্দু থেকেই “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর ধ্বনি আসছিলো । এমনাবস্থায় খাদিম একটি শিশিতে কিছু পানি রেখে দিলো, কিছুক্ষণ পর আবার ঐ পানির বিন্দুসমূহ থেকে “মুহামমাদুর রাসুলুল্লাহ” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর আওয়াজ আসলো এবং সাথে সাথে হযরতের দেহ পূর্বাবস্থায় ফিরে এলো।অতঃপর, হুযুর সুলতানুল আরিফিন পরে যখন খানকাহে তাশরীফ আনলেন তখন আবার যোগী তাঁর সামনে এসে উপস্থিত হলো এবং বললো “আপনার আমল আমার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল, আপনি খুব দ্রুত গেলেন এবং অতি দ্রুতই ফিরে এলেন আর আমি খুব দেরীতে গেলাম এবং দেরীতে ফিরে আসলাম, তবে আমাদের উভয়ের আমল কিন্তু একই।” প্রত্যুত্তরে হযরত ইরশাদ করলেন, কক্ষনো না।এ বলে হযরত খাদিম কে ডেকে যোগীর পানির শিশি এনে যোগীর হাতে তুলে দিতে বললেন, এবং যোগীকে শিশির ঢাকনা খুলতে বললেন, যোগি যেমনি শিশির ঢাকনা খুললো সাথে সাথে অসহ্যকর দুর্গন্ধ বের হতে লাগলো এবং উপস্থিত লোকদের বমি আসতে লাগলো, দুর্গন্ধ এতটাই বিকট ছিল যে খোদ যোগীও তা সহ্য করতে না পেরে দূরে গিয়ে শিশিটি নিক্ষেপ করে আসলো। এরপর হযরত খাদিমকে নিজের শিশি আনতে বললেন, এবং শিশি খোলা হল, শিশির মুখ খোলার সাথে সাথেই পুরো মাহফিল সুগন্ধিতে ভরপূর হয়ে গেলো, উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ আনন্দিত ও উজ্জীবিত হলেন এ দৃশ্য দেখে হিন্দু যোগী জিজ্ঞেস করলো “এমন কেন হলো” ? হুযুর সুলতানুল আরিফিন সংক্ষিপ্তভাবে জবাব দিলেন “ঐটা কুফর ছিল এবং এটা ঈমান”। তখন যোগী বললো, “এতো বছর সাধনা ও তপস্যা করার পরও কেন আমার অন্তরের তালা খুললোনা” ? উত্তরে হুযুর সুলতানুল আরিফিন বললেন, “তোমার নিকট যে তালা খোলার চাবি নেই” যোগী জিজ্ঞেস করলো,সেটি আবার কোন চাবি ? হুযুর সুলতানুল আরিফিন ইরশাদ করলেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম পাঠ করে নাও, তবেই অন্তরের বন্ধ তালা খুলে যাবে এবং নিজের অস্তিত্বের খুশবুও পেয়ে যাবে, এ কথা শোনা মাত্র যোগী হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর কোমল চরণে লুটিয়ে পড়লো এবং ইসলামে দাখিল হয়ে গেলো।

হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর অন্য এক কারামত হল হযরত যখন ক্লাসে পাঠদান করতেন তখন তিনি পাঠদানের বিষয়টিকে পরিপূর্ণরূপে খোলাসা করে ছাত্রদের সামনে তুলে ধরতেন, হুযুরের খাস ছাত্র মাওলানা আব্দুল বাকী জৌনপুরী বর্ণনা করেন, “একদিন আমাদের সাথীদের মাঝে এক ছাত্রের “কিতাবুশ শিফা ওয়াল ঈশারাত” নামক কিতাবের একটি বিষয় বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল, হুযুর সুলতানুল আরিফিন বারংবার তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তবে শিক্ষার্থী বলছিল এখানে উদ্দেশ্য ভিন্ন, অনেকক্ষণ তর্কবিতর্কের পর হযরত চুপ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন” আমার থেকে যখন তুমি বুঝতে চাচ্ছনা তবে ইনার থেকেই বুঝে নাও” কিছুক্ষণ এর মধ্যেই একজন দীর্ঘদেহী, অত্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ এক বুযুর্গ এসে উপস্থিত হয়ে হযরতের পাশে বসে পড়লেন, এমতাবস্থায় ছাত্র ঐ ব্যক্তির সামনে কিতাব পেশ করলো এবং তাঁর নিকট নিজের দ্বিধার ব্যাপারে প্রশ্ন করলো। ছাত্রের প্রশ্ন শুনে বুযুর্গ বিলম্ব না করে হুবহু সেই জবাব দিলেন, যা কিছুক্ষণ পূর্বেই হুযুর সুলতানুল আরিফিন ঐ ছাত্রকে দিয়েছিলেন, জবাব শুনে ছাত্র পরিপূর্ণ সন্তষ্ট হয়ে গেলো, ফলে ঐ বুযুর্গ উঠে চলে যেতে লাগলেন, আমরাও তাঁর পিছু নিলাম, কিছুক্ষণ যাওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম, “হযরত, আপনার পরিচয় কি” ? উত্তরে বললেন “বু আলী সিনা” উত্তর শুনে আমরা সকলেই হতভম্ব হয়ে গেলাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

হুযুর সুলতানুল আরিফিন এবং তাওায়াক্কুল আলাল্লাহ-হুযুর সুলতানুল আরিফিন তাওয়াক্কুল আলাল্লাহ এর জলজ্যান্ত প্রমাণ ছিলেন, তাঁর পরিবার সদস্যের সংখ্যা ছিল অধিক কিন্তু ধনসম্পদ এর পরিমাণ ছিল এর তুলনায় অনেক কম, তিনি নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত অনুসরনকরতঃ নয় বার বিবাহ করেন এবং তাঁর ঔরস হতে পঞ্চাশজন আওলাদ জন্মলাভ করেন এবং তাদের সবার ভরণপোষণের দায়িত্ব হুযুর সুলতানুল আরিফিনের উপরেই ছিল, এর পাশাপাশি খানকাহে আগত ও অবস্থানকারী সমস্ত গরীব, মিসকিন ও অসহায়দের থাকা খাওয়া এবং দেখাশোনার দায়িত্ব ও তাঁর উপরেই ছিল। এ সব কিছু থাকা সত্ত্বেও তিনি বাদশাহগণ কর্তৃক প্রেরিত জাইগীর বা জমিন উপঢৌকন স্বরূপ গ্রহন কখনো পছন্দ করতেননা, পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যক্তি, বাদশাহের উযিরগনের আর্থিক সাহায্য ও গ্রহন করতেননা। শুধুমাত্র খানকাহে যা কিছু হাদিয়াস্বরূপ পেশ করা হতে তাঁর দ্বারাই সমস্ত খরচের যোগান দিতেন। এ সব কারণেই সর্বদা আর্থিক অসচ্ছলতা তাঁর নিত্যসঙ্গী ছিল, তথাপি তিনি অসচ্ছলতাকে আল্লাহ তাআলার উপর তাওাক্কুল করতঃ বীরত্বের সহিত গ্রহন করতেন। হযরত খিযির আলাইহিস সালাম প্রায়ই তাঁর নিকট আসতেন এবং তাঁর অবস্থা সমূহ পর্যবেক্ষণ করতেন। এমনই একদিন হযরত খিযির আলাইহিস সালাম হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর নিকট আগমন করলেন এবং একটি পরশমণি উপহার দিলেন এবং তা ব্যবহার করে অসচ্ছলতা দূর করার উপদেশও দিলেন। এর কিছুদিন পর হযরত খিযির আলাইহিস সালাম আবার তাশরীফ আনলেন এবং দেখলেন হযরতের আর্থিক অবস্থা পূর্বের ন্যায় অপরিবর্তিত। হযরত খিযির আলাইহিস সালাম হুযুরকে পরশমণির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন, হুযুর সুলতানুল আরিফিন তাঁর এক ছাত্রকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন “কিছুদিন পূর্বে তোমাকে যে পাথরটি রাখতে দিয়েছিলাম, সেটি কোথায় রেখেছ ?” ছাত্র ঘাবড়ে গেল এবং বললো “হুযুর পাথরটি দিয়ে আমি খেলা করছিলাম এবং খেলতে খেলতে পাথরটি আমার হাত থেকে কুয়ার মধ্যে পড়ে যায়। একথা শুনে হযরত খিযির আলাইহিস সালামের সাথে হুযুর সেখানে গেলেন, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম কুয়ার ভেতর উঁকি দিয়ে দেখলেন পুরো কুয়া পরশমণি দ্বারা ভরে গিয়েছে এবং ইহা দেখে তিনি খিযির আলাইহিস সালাম ইরশাদ করলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কামিয়াব হয়ে গেছেন”। আল্লাহ তাআলা যাকে এ পরিমাণ ক্ষমতা দিয়েছেন, তাঁর আবার পরশমণির কি প্রয়োজন ?” এ কথা শুনে হুযুর সুলতানুল আরিফিন ইরশাদ করলেন, “হে আমার ভাই, আমি এমন সম্পদ চাই না, বরং আমি দু’আ করি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমার বংশে এমন সম্পদ দান করেন, যা কোন চোর কোন দিনই চুরি করতে সক্ষম হবে না। এবং, নিঃসন্দেহে সে সম্পদের নাম হল ইলম।

হযরত সুলতানুল আরিফিন এর বাই’আত- হুযুর সুলতানুল আরিফিন মাওলানা শাহবাজ মুহাম্মাদ ভাগলপুরী রহমাতুল্লাহি তাআলা আলাইহি এর খিলাফাত ও বাই’আত সায়্যিদুল মুহাদ্দিসিন মীর সায়্যিদ ইয়াসিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট ছিল, হুযুর সুলতানুল আরিফিন যখন মুঙ্গেরে অবস্থানরত ছিলেন তখনই তিনি মীর সায়্যিদ ইয়াসিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট হতে বাই’আত ও খিলাফাত গ্রহন করেন। প্রায়, সমস্ত সীরাত ও ইতিহাস গ্রন্থে এ কথা উল্লেখিত রয়েছে যে হুযুর সুলতানুল আরিফিনের সহিত মীর সায়্যিদ ইয়াসিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মুঙ্গেরের কেল্লার বহিরাংশে সকাল বেলা সাক্ষাৎ হয় । মীর সায়্যিদ ইয়াসিন হযরত সুলতানু আরিফিন এর আলিম এর ন্যায় সুরত দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি শাহবাজ মুহাম্মদ নামক বুযুর্গের ব্যাপারে কিছু জানেন ?” সুলতানুল আরেফিন উত্তর দিলেন, “শাহবাজ মুহাম্মাদ নামক বুযুর্গকে তো চিনিনা অবশ্য, ফকির শাহবাজ আপনার সামনেই রয়েছে, একথা শুনে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে হুযুর সুলতানুল আরিফিনকে সাথে নিয়ে নিজ গৃহে আসলেন । কথোপকথনের মাঝে সুলতানুল আরিফিন বললেন, আমার নিকট নাবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ পৌঁছেছে এবং আপনার নিকট বাই’আত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সুতরাং আপনি আমাকে মুরীদ করে নেন। উত্তরে হযরত ইয়াসিন বলেন, “আপনি বরং আমাকে মুরীদ করে নেন”এভাবে তিন দিন যাবৎ বহস চলতে থাকলো, তারপর তারা বয়সের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেন, যেহেতু অসংখ্য মাস’আলায় নাবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বয়সকে প্রাধান্য দিয়েছেন, সুতরাং হুযুর সুলতানুল আরিফিনকে হযরত মীর সায়্যিদ ইয়াসিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুরীদ করে নেন অতঃপর নিজের পুরো পরিবারবর্গ এবং সমতস্ত আওলাদগণকে হুযুর সুলতানুল আরিফিনের হাতে বাই’আত হওয়ার নির্দেশ দেন, এবং এরই পাশাপাশি হুযুর সুলতানুল আরিফিনকে সমস্ত সিলসিলায় (প্রায় ১২৭) বাই’আত করার অনুমতিও প্রদান করেন।

নিজ শাইখের ও তাঁর সন্তানদের প্রতি হুযুর সুলতানুল আরিফিনের শ্রদ্ধা-হুযুর সুলতানুল আরিফিন প্রায় ৯ বছর আপন শাইখের খিদমতে অতিবাহিত করেন, এই ৯ বছরে হুযুর সুলতানুল আরিফিন আপন শাইখের ভরপুর খিদমত করে ইলমি ও রূহানী ফুয়ুযাত হাসিল করেন। তিনি নিজের জরুরী কাজসমূহ হতে ফারেগ হওয়ার পর নিজ শাইখের বাগানে গাছগুলোতে পানি দিতেন এবং বাগানের ফুলগাছ থেকে ফুল ছিড়ে জমা করে এনে আপন শাইখের খিদমতে পেশ করতেন, দ্বীনিও প্রাকৃতিক কাজ সমূহ ব্যতিত সর্বদাই নিজ শাইখের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকতেন, দারস হাসিল করার সময় ব্যতিত কখনোও বসতেন না,হুযুর সুলতানুল আরিফিন এতটা সৌভাগ্যবান ছিলেন যে, তাঁর শাইখ সর্বদা তাঁর প্রশংসায় লিপ্ত থাকতেন, তিনি বলতেন “যে শাইখ এমন মুরীদ পাবে, তাঁর জন্য আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই, হুযুর সুলতানুল আরিফিন নিজ শাইখের সন্তানগণের প্রতি চূড়ান্ত আদব ও বিনয়ের প্রদর্শন করতেন। যদিও শাইখের সন্তানগণ তাঁর নিজের মুরীদ ছিলেন তথাপি, শাইখের সম্পর্কের প্রতি খেয়াল রেখে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেন। হযরত মাওলানা নিযামুদ্দীন হায়দার রহমাতুল্লাহি আলাইহি যিনি মীর সায়্যিদ ইয়াসিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ভাতিজা ছিলেন, যখন তিনি হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর দারসে উপস্থিত হতেন তখন হযরত সম্মানের সহিত তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন এবং নিজ আসন তাঁর বসার জন্য ছেড়ে দিয়ে তাঁকে নিজ আসনে বসাতেন এবং নিজে ছাত্রের ন্যায় তাঁর সামনে দু হাঁটু বিছিয়ে বসে পড়তেন। দারস দেয়াকালীন সময়ে কোন জায়গায় যদি সংশোধনের প্রয়োজন হতে তবে তাঁর নামের স্থলে নিজের নাম সম্বোধন করে বলতেন, “শাহবাজ মুহাম্মাদ, এভাবে নয়, এভাবে পড়”।

হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর প্রসিদ্ধ উপাধিসমূহ- মাহিউল বিদ’আত (বিদ’আত বিতারণকারী), তাজুশ শারী’আহ (শরীয়তের মুকুট), বাদরুত তারীকাত (তরিকতের পূর্ণ চন্দ্র), মুজাদ্দিদে মিআতে হাদী আশার (এগার শতাব্দীর মুজাদ্দিদ্‌) মালিকুল উলামা (উলামাকূল শিরোমণি), সায়্যিদুল ফুকাহা (ফকীহগণের প্রধান), নায়িবুন নাবী (নবীর উত্তরসূরি), ইমামুল আউলিয়া (আউলিয়াগণের ইমাম), নাসিরুল মুসলিমীন (মুসলমানদের সাহায্যকারী), বাহরুস সালাসিল (একাধিক সিলসিলার সমন্বয়কারী), আবু হানিফায়ে যামাঁ (যুগের আবু হানিফা), আরশ পারওয়ায, ইত্যাদি ছাড়াও আরো উপাধি রয়েছে, যায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় সেগুলো লেখা হয়নি।

হুযুর সুলতানুল আরিফিনের ইন্তিকাল- হুযুর সুলতানুল আরিফিন১০৫০বা ১০৫১ হিজরীর ১৬ ই সফর রোজ বৃহস্পতিবার বাদ নামাযে আসর প্রতিদিনের ন্যায় বিশ্বখ্যাত হাদীসশাস্ত্র মিশকাত শরীফের দারস দেন এবং দারস শেষ করে বাড়ি ফেরার পর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। হযরতের ইন্তিকালের প্রায় ৪০০শত বছর পেড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত তাঁর দরবার মাখলুকে খোদার আশ্রয়স্থল হিসেবে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই সাদরে গ্রহণ করে আসছে এবং দরবার থেকে অনবরত রূহানী ফয়জান জারী রয়েছে এবং তাঁর মুবারাক হাতে স্থাপিত জামি’আহ শাহবাজিয়া অদ্যবধি তালিবে ইলমদের মুহাম্মাদী ইলমের সুধা পান করাচ্ছে ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হুযুর সুলতানুল আরিফিন এর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তঊফিক দান করুন এবং হাশর দিবসেও হুযুর সুলতানুল আরিফিনের জামাআতে আমাদেরকে শামিল থাকার তৌফিক দান করুন ।

 




Mazar of Maulana Sayyed Shahbaz Muhammad (ra) at Bhagalpur, Bihar, India


Written By Syed Arbaz Shahbazi
 

This site is dedicated to Dr. Syed Khalilullah
A wonderful man who believed in the future of Shahbaz Center and donated it's land.

 home  |  articles  |  who we are  |  Q & A on sufism  |  common misconceptions in islam  |  articles on extremism
hadith  |  ways of the path  |  links  |  guest book  |  favorite CDs  |  contact us

Facebook

Copyright © 2006-2021 Shahbaz Center for Knowledge & Peace. All rights reserved.