home  |  articles  |  who we are  |  contact us

Shahbaz Center
Center for Sufism & Islamic Studies

 

Join Our Discussion Forum: 
WeLoveAllah

Helpful Links:
www.zaytuna.org
www.masud.co.uk
www.sunnipath.com
www.therevival.co.uk
www.livingislam.org
www.radiodarvish.com
 

 

 

 

 

 

 

 

  

Shah Muhammad Gaus Gwaliori

সুলতানুল মুওয়াহহিদীন হযরত শাহ মুহাম্মাদ গাউস গাওয়ালইয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি

জন্মঃ- সিলসিলায়ে শাত্ত্বারীয়ার অন্যতম দ্যীপ্তমান নক্ষত্র্য সুলতানুল মুওয়াহহিদীন হযরত শাহ মুহাম্মাদ গাউস গাওয়ালইয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ৯০৭ হিজরীর ৭ই রজব মোতাবেক ১৫ই জানুয়ারী ১৫০২ ইং সাল জুমা নামাজের প্রাক্কালে জন্মগ্রহণ করেন বলে স্বীয় গ্রন্থ “আওরাদে গাওসিয়্যাহ”তে উল্লেখ করেন । শায়খের জন্মস্থান বিহারের পাটনার যাহুরাবাদ গাযীপুর জিলায়।

বংশীয় পরিচয়ঃ- শায়খের পিতামহোদয়ের নাম খাতীরুদ্দীন এবং দাদাজানের নাম আব্দুল লাতীফ ছিল। শায়খ প্রখ্যাত সুফী বুযুর্গ হযরত শাইখ ফারীদুদ্দীন আত্তার নিশাপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বংশধর ছিলেন। শা‍য়খের আদিপিতাগণের আবাসস্থল ইরানের নিশাপুর শহরে ছিল, সেখান থেকে তাঁর পরদাদা হযরত শায়খ মুঈনুদ্দীন কাত্তাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি সর্বপ্রথম হিন্দুস্তানে আগমন করেন এবং জৌনপুরে তাঁর ইন্তিকাল হয়। শাইখের ৭জন ভাই ছিলেন।

শৈশব ও জ্ঞানার্জনঃ- শৈশবকাল থেকেই তিনি অত্যন্ত সতর্কতা ও নিষ্ঠার সহিত সময় অতিবাহিত করতেন। অপ্রয়োজনীয় কোন কাজে একটি মুহুর্তও অপব্যয় করতেন না। শাইখ তাঁর নিজ শৈশবের ব্যাপারে উল্ল্যেখ করেন “ আমার বয়স যখন ৭ বছর, তখনই তাসাউফ জগতে পদার্পণ করি। অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তাগণ যদিও একথা দাবী করেছেন যে, তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুস্তকভিত্তিক দ্বীনী শিক্ষা হাসিল করেননি, তবে তাদের এ দাবীটি পুরোপুরি সঠিক নয়, কেননা শাইখের জীবনীগ্রন্থ সমূহের মাঝে সবচেয়ে পুরাতন ও গ্রহণযোগ্য জীবনীগ্রন্থে শায়খের প্রিয় খলিফা হযরত ফাযলুল্লাহ শাত্ত্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন যে, শায়খ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও অর্জন করেন। নাহ্‌ভ, সর্‌ফ, ফিক্‌হ, কুর’আন, হাদীস ইত্যাদির শিক্ষা লাভ করেন। এছাড়াও ছাত্রজীবনে যখন জৌনপুরের কাযী সদ্‌রে জাহাঁ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বাসভবনে অবস্থান করছিলেন, তখন তাঁর নিকট হতে ইল্‌মে নাহ্‌ভ্‌ এর প্রসিদ্ধ কিতাব “কাফিয়া” পাঠ করেন। ১৫ বছর বয়সে যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কৃতিত্বের সাথে সমাপ্ত করেন। শায়খ তাঁর ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত জীবনী সম্পর্কে “আওরাদে গাউসিয়্যাহ” নামক গ্রন্থে নিজেই সংক্ষিপ্তরূপে উল্ল্যেখ করেছেন, তিনি নিজের ব্যাপারে এভাবেই বর্ণনা করেন “এই দরবেশের বয়স যখন ৭ বছর তখনই এই পথে আগমন হয়, ৯ বছর বয়সে মা’রিফাত হাসিল হয়, ১৫ বছর বয়সে পথ প্রদর্শক হিসেবে দায়িত্বপালন আরম্ভ হয়। ২২ বছর বয়সে মেরাজ লাভ হয়, ২৫ বছর বয়সে ছাত্রদেরকে নিজের ন্যায় জ্ঞানী ও মর্যাদাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার মত সক্ষমতা অর্জন হয়। এবং যখন ৩৩ বছর বয়সে জনসাধারণের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয় এবং এরই সাথে ইমামাত ও নেতৃত্ব হাসিল হয়। ৪০ বছর বয়সে পা রাখতেই যুগের রাজা বাদশাহ্‌দের সহিত বিভিন্ন কারণে বিরোধ সৃষ্টি হতে থাকে এবং দূরত্বও বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এর দরুন উক্ত এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং গুজরাতে হিজরত করে সেখানে “চাঁপানীড়” নামক কেল্লার নিকট “আওরাদে গাউসিয়্যাহ” নামক কিতাবের লেখা সম্পাদন করে এবং তখন এই ফকীরের বয়স ছিল ৪৩ বছর এবং উপরোল্লেখিত পুরো বর্ণনাটি ৯৪৯ হিজরীর জামাদিউল আউয়াল মাসে লেখা হয়।“

বাই’আত ও “গাউসিয়্যাত” অর্জনঃ- “মানাকিবে গাউসিয়্যাহ” গ্রন্থকার হযরত শায়খ ফাযলুল্লাহ শাত্ত্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, শায়খ মুহাম্মাদ গাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন জৌনপুরে অবস্থানরত ছিলেন তখন প্রতিদিন তাঁর পরদাদা হযরত শায়খ মুঈনুদ্দীন কাত্তাল রহমাতুল্লাহি আলাইহির মাযার শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যেতেন। একদিন তীব্র মনোবাসনা পূরণার্থে মাযার শরীফেই রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখানে রয়ে যান, গভীর রাত্রিতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন এবং একটি আওয়াজ শুনতে পান, যেখানে বলা হয়েছিল, “ বাবা মুহাম্মাদ!, তুমি সিদ্দিকীর (হযরত শায়খ আবুল ফাত্‌হ হিদায়াতুল্লাহ সারমাস্‌ত রহমাতুল্লাহি আলাইহি) খেদমতে চলে যাও এবং তাঁর পাদুকা বহন করো, যাতে করে তোমার ভেতরের লুকায়িত প্রতিভাগুলো প্রকাশিত হয়”। এমনটি নির্দেশনা পেয়ে শায়খ জৌনপুর ত্যাগ করে “গোর” নামক স্থানে হযরত শায়খ আবুল ফাত্‌হ হিদায়াতুল্লাহ সারমাস্‌ত রহমাতুল্লাহি আলাইহির (ওয়াফাত -৯৪৬ হিঃ) নিকট উপস্থিত হন। সেখানে তিনি কিছুদিন অবস্থান করে হযরত আবুল ফাত্‌হ কর্তৃক ফায়য প্রাপ্ত হয়ে “কানোদার” নামক যায়গায় গমন করেন এবং সেখান থেকে অপর একটি শহরে পৌছান। সেখানে একটি পাহাড় দেখতে পান, খোজ নিয়ে জানতে পারেন যে, পাহাড়ের ওপর এক বুযুর্গের আস্তানা রয়েছে। বুযুর্গের অবস্থান জেনে শায়খের মনে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করার প্রবল আকাংখ্যা সৃষ্টি হয়, পাহাড় বেয়ে বুযুর্গের নিকট পৌছাতেই তিনি তাঁকে ডেকে নিয়ে কাছে বসান এবং ইরশাদ করেন, “খোশ আমদেদ, এখানে এসে খুব ভাল করেছ এবং যথা সময়ে উপস্থিত হয়েছ, আমি তোমারই অপেক্ষায় ছিলাম, আল্লাহ তা’আলা আমাকে “গাউসিয়্যাত” দান করেছেন এবং বর্তমানে আমার পার্থিব হায়াত ফুড়িয়ে এসেছে, কিছুকাল পূর্বেই আমাকে তোমার সুরত দেখানো হয়েছিল এবং পাশাপাশি তোমার বৈশিষ্টও বর্ণনা করা হয়েছিল, এবং আদেশ করা হয়েছে, যে “ওমুক সময়ে এ ব্যক্তিটি আসবে। সুতরাং, তুমি তোমার নিকট থাকা “মাকামে গাউসিয়্যাত” তাঁর নিকট সপে দিয়ে স্বীয় রবের নিকট প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি গ্রহণ করো।“ অতএব, আলহামদুলিল্লাহ, আমি তোমার নিকট আমানত পৌছে দিলাম। তুমি এখন চাইলে যেতে পারো। শায়খ পাহার থেকে নেমে আসলেন। অতঃপর দ্বিতীয় দিন যখন আবার উক্ত বুযুর্গের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে আরোহণ করলেন তখন দেখেতে পেলেন, তিনি নামায শেষ করে সিজদায় নত রয়েছেন এবং সে অবস্থাতেই রূহ মুবারক শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় শায়খ স্বয়ং নিজেই তাঁর কাফন দাফনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উক্ত স্থান ত্যাগ করে পুনরায় “গোর” নামক স্থানে ফিরে এসে হযরত শায়খ আবুল ফাত্‌হ হিদায়াতুল্লাহ সারমাস্‌ত রহমাতুল্লাহি আলাইহির নিকট উপস্থিত হন এবং তাঁর হাত মুবারকে বাই’আত হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। জবাবে শায়খ আবুল ফাত্‌হ্‌ ইরশাদ করেন, “তোমার বাই’আত শায়খ হাজী হামীদুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর হাত মুবারকেই নির্ধারিত রয়েছে, সুতরাং তুমি সারানপুর চলে যাও”। হযরত শায়খ আবুল ফাত্‌হ রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক আদিষ্ঠ হয়ে শায়খ সারানপুর অভিমুখে যাত্রা আরম্ভ করেন। সারানপুর পৌছে শায়খ হাজী হামীদুদ্দীন হাসূর রহমাতুল্লাহি আলাইহির (ওয়াফাত-৯৩০ হিঃ) নিকট উপস্থিত হন, তাঁর পদদ্বয় চুম্বন করে তাঁর হাত মুবারকে বাই’আত গ্রহণ করেন। “আখবারুল আখ্‌য়ারে” হযরত শায়খ আব্দুল হাক্ব মুহাদ্দিসে দেহ্‌লাভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বর্ণনামতে শায়খের সাত ভাইও এই সময়ে একই সাথে বাই’আত গ্রহণ করেন।

লোকালয় ত্যাগ ও “জাওয়াহিরে খাম্‌সা” রচনাঃ- অতঃপর শায়খ নিজ মুর্শিদের নির্দেশনানুযায়ী “চুনার” নামক বনের গহীনে গিয়ে কঠোর মুজাহাদায় আত্মনিয়োগ করেন। এবং সেথায় দীর্ঘ ১২ বছর কঠিন সাধনা ও নফস নিয়ন্ত্রনে নিয়োজিত থাকেন। সুদীর্ঘ সময়টিতে তিনি আহার হিসেবে কেবলমাত্র গাছের পাতা ও ফলের ওপর নির্ভর করে ছিলেন। এ সময়ের মাঝেই শায়খ তাঁর বিশ্বখ্যাত গ্রন্থ “জাওয়াহিরে খাম্‌সা” রচনা করেন এবং মুজাহাদা শেষ করে নিজ মুর্শিদের নিকট ফিরে গিয়ে “জাওয়াহিরে খাম্‌সা” পেশ করেন। মুর্শিদ স্বীয় শাগির্দের এমন অনন্য, অনবদ্য রচনা দেখে অত্যন্ত গর্বিত ও পুলকিত হন।

ইজাযাত ও খিলাফাতঃ- অতঃপর শায়খকে তাঁর মুর্শিদ খিলাফত দান করেন পাশাপাশি শাত্ত্বারিয়্যাহ সিলসিলা সহ আরো কতিপয় সিলসিলায় বাই’আত করার অনুমতি প্রদান করেন। উল্লেখ্য, অধিকাংশ লোকই এ ধারণা রাখেন যে, শাত্ত্বারিয়্যাহ সিলসিলার প্রবর্তক শাইখ সিরাজুদ্দীন আব্দুল্লাহ শাত্ত্বার রহমাতুল্লাহি আলাইহি, কিন্তু ধারণাটি পরিপূর্ণরূপে সঠিক নয়, শাত্ত্বারিয়্যাহ সিলসিলার মূল প্রবর্তক হযরত সুলতানুল আরিফীন বায়াযীদ বিস্তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি , ইরানে উক্ত সিলসিলার নাম ছিল “ইশ্‌ক্বিয়্যাহ”, রোমে এর নাম ছিল “বিস্‌তামিয়্যাহ” এবং ভারতীয় উপমহাদেশে শাইখ সিরাজুদ্দীন আব্দুল্লাহ শাত্ত্বার রহমাতুল্লাহি আলাইহি একে শাত্ত্বারিয়্যাহ নামে পরিচিত করান। “খাযিনাতুল আসফিয়া” প্রণেতা মুফতি গুলাম সার্‌ওয়ার লাহোরীর মতে শায়খকে ১৪টি সিলসিলায় বাই’আত করার ইজাযাত দেয়া হয়। এ ব্যাপারে শায়খ স্বীয় গ্রন্থ “আওরাদে গাউসিয়্যাহ”তে নিম্নে বর্ণিত সিলসিলা সমূহ হতে ফায়য হাসিল করার কথা ইরশাদ করেছেন, চিশ্‌তিয়্যাহ, ফিরদাউসিয়্যাহ, সুহ্‌রাওয়ারদিয়্যাহ, কাদিরিয়্যাহ, তাইফুরিয়্যাহ, খাল্‌ওয়াতিয়্যাহ, রাব্বানিয়্যাহ, মাদারিয়্যাহ।

গাওয়ালয়ার সফরঃ- মুর্শিদে পাকের নিকট হতে খিলাফাত ও ফায়্‌য হাসিল করার পর শায়খ তাঁর পরবর্তী গন্তব্য ও স্থায়ী ঠিকানার বিষয়ে মুর্শিদের নিকট জানতে চাইলেন। মুর্শিদে পাক জবাবে ইরশাদ করলেন “ সমগ্র জাহান আপনার, আমি আপনার জন্য কোন যায়গা নির্দিষ্ট করতে ইচ্ছুক নই, সুতরাং যেখানে আপনার পছন্দ হয়, সেখানেই চলে যান। অতঃপর শায়খ মুরাকাবায় মগ্ন হন এবং “গাওয়ালয়ার” নামক স্থানের প্রতি তাঁর মনোনিবেশ হয়, তাই তিনি গাওয়ালয়ার এর উদ্দেশ্যে সফর আরম্ভ করেন। সেখানে উপণীত হয়ে গাওয়ালয়ার এর কেল্লায় বসবাস করতে আরম্ভ করেন। সেটি ছিল মুঘল সম্রাট জালালুদ্দীন মুহাম্মাদ আকবর এর শাসন আমল, তৎকালীন যুগে গাওয়ালয়ার শহরে প্রচুর আওলিয়ায়ে কিরাম ও সালেহীন বান্দাদের আনাগোনা ছিল, এবং শায়খ মুহাম্মাদ গাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও তাদের মধ্য হতে একজন ছিলেন যিনি “মাক্বামে গাউসিয়্যাতে” ও প্রতিষ্ঠিত ছিলেন ।

শায়খ মুহাম্মাদ গাওস ও মুঘল বাদশাহগণঃ- সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের প্রাথমিক যুগ থেকেই এ শহরে শায়খের অগণিত মুরীদ ও ভক্ত ছিল। এ ছাড়া সম্রাট হুমায়ুন ও তাঁর পুত্র আকবর উভয়ের অন্তরেই শায়খের জন্য ছিল অকৃত্রিম ও অগাধ শ্রদ্ধা, যার দরুন তারা উভয়েই যখনি শায়খকে উদ্দেশ্য করে কোন চিঠিপত্র লিখতেন তখন “পীরানে পীর” বা “গাউসুস সাকালাইন” বলে সম্বোধন করতেন। শায়খের মর্যাদা বর্ণনায় ইতিহাসবিদ থমাস উইলিয়াম বিল তার অ্যান ওরিয়েন্টাল বায়োগরাফিকাল ডিকশনারী তে উল্লেখ করেন “শায়খ মুহাম্মাদ গাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুস্তাজাবুদ দা’ওয়াত (যার দু’আ ফিড়িয়ে দেয়া হয়না) ছিলেন যা ভবিষ্যতবাণী করতেন আল্লাহ ত’আলার ইচ্ছায় তাই বাস্তবায়িত হত। এ সমস্ত কারণে তাঁর প্রসিদ্ধি দূর দূরান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এবং যুগের সম্মানিত রাজা বাদশাহগণও যথাযথ আদব রক্ষা করে তাঁর দরবারে উপস্থিত হতেন। উল্লেখ্য, মুঘল সম্রাট বাবুর, হুমায়ুন এবং আকবর সকলেই শায়খের অনুরক্ত ছিলেন । তাতার খানের বিরুদ্ধে সম্রাট বাবুরের গাওয়ালয়ারের কেল্লা বিজয়ে শায়খ এক অনন্য ও অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন, আর সম্রাট হুমায়ুন, যিনি শায়খের চেয়ে বয়সে ৬ বছর অনুজ ছিলেন, শায়খের সহিত অত্যন্ত সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, এ ছাড়াও তিনি শায়খের বিশেষ ভক্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, এ ছাড়াও সম্রাট আকবরের রাজসভার প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ “মিয়া তান সেন” শায়খ এর একনিষ্ঠ অনুরক্ত ছিলেন এবং আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে শায়খ এর সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করতেন। ১৫৮৬ ইং সালে “মিয়া তান সেন” দিল্লীতে ইন্তিকাল করেন এবং মৃত্যুর পর তাঁর ওয়াসিয়্যাত অনুযায়ী তাঁর মৃতদেহ দিল্লী থেকে দীর্ঘ ৩৫০ কিলোমিটার বহন করে গাওয়ালয়ার নিয়ে আসা হয়, এবং সেখানে তাঁর মুর্শিদ শায়খ মুহাম্মাদ গাউস এর মাযার শরীফের পদভাগে সমাহিত করা হয়।

গাওয়ালয়ার ত্যাগঃ- ৯৪৭ হিঃ সালে শের শাহ সূরী যখন ক্ষমতা লাভ করে তখন সে শায়খকে অহেতুক বিরক্ত করতে করতে লাগলো। সুতরাং বাধ্য হয়ে শায়খ গাওয়ালয়ার ত্যাগ করে গুজরাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এ সময়ে শায়খের বয়স হয়েছিল ঠিক ৪০ বছর।

শায়খের বিরুদ্ধে ফতোয়াঃ- গুজরাতে অবস্থানকালীন সময়ে শায়খ এমন কতিপয় মত প্রকাশ করেন, যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে শরিয়তবিরোধী। কতিপয় উলামায়ে যাহের এসকল বিষয়ে শায়খের ব্যাপক সমালোচনা আরম্ভ করে তাঁর বিরোধিতা করতে থাকেন, এক পর্যায়ে তাঁরা শায়খের ওপর কুফরের ফতোয়া আরোপ করতেও কুন্ঠিত বোধ করেননি। এমতাবস্থায় তাকে মৃত্যদন্ড দেয়ার লক্ষ্যে তৎকালীন ওলামায়ে কেরামের নিকট হতে গণস্বাক্ষর গ্রহণ করে মৃত্যু পরোয়ানা তৈরী করে ফেলা হল। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক মুল্লা আব্দুল কাদির বাদায়ুনী উল্ল্যেখ করেন, “যখন সুলতান মাহমুদ গুজরাতীর শাষনামলে শায়খ মুহাম্মাদ গাউস গুজরাত গেলেন, তখন সে যুগের প্রবীণ, মান্যবর আলিম ও প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, হাদিসগ্রন্থ “কান্‌যুল উম্মাল” প্রণেতা আল্লামা আলী মুত্তাকী হিন্দী তাঁর মৃত্যুদন্ডের ফতোয়া প্রদান করেন । ফতোয়া হাতে পেয়ে বাদশাহ এর কার্যকারিতার সিদ্ধান্ত সে যুগের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞ আলিমে দ্বীন হযরত মাওলানা শায়খ ওয়াজীহুদ্দীন আলাভী গুজরাতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন।

শায়খের দরবারে ওয়াজীহুদ্দীন গুজরাতী রহমাতুল্লাহি আলাইহিঃ- অতএব, শায়খ ওয়াজীহুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন শায়খের বক্তব্য শোনার উদ্দেশ্যে তাঁর নিকট উপস্থিত হন, প্রথম দর্শনেই শায়খ ওয়াজীহুদ্দীন রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর এরূপ অনুরক্তে পরিণত হন যে, অজান্তেই তিনি ফতোয়ার কাগজটি ছিড়ে কুচি কুচি করে ফেলেন। বরং, একটি বর্ণনা মতে হযরত শায়খ ওয়াজিহুদ্দীন গুজরাতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি একাই নন বরঞ্চ ২৭০ জন আলিমকে সাথে নিয়ে শায়খের সমালোচনা করার জন্য তাঁর দরবারে উপস্থিত হয়েছিলেন, এমতাবস্থায় শায়খ তাঁর দিকে সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান, আর এদিকে শায়খ ওয়াজীহুদ্দীন সমালোচনার যাবতীয় বিষয়বস্তু ভুলে যান, আর চিৎকার করে বলেন “নিঃসন্দেহে আপনি একজন গাউস, এতে যে সন্দেহ করে সে একজন কাফির।“ এ ছাড়াও তিনি নিজের ব্যাপারে বলেন, “পূর্বেতো শুধুই ইল্‌ম ছিল, মা’রিফাত ছিলনা, আমাকে আল্লাহ পর্যন্ত যিনি পৌছিয়েছেন তিনি হচ্ছেন শায়খ মুহাম্মাদ গাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর স্বত্ত্বা।“ ঘটনা এখানেই শেষ নয়, বরং শায়খ ওয়াজীহুদ্দিন শাহ্ মুহাম্মাদ গাউস দ্বারা এতটাই প্রভাবিত হন যে, প্রথম স্বাক্ষাতেই তাঁর হাত মুবারকে বাই’আত হয়ে যান। শায়খ ওয়াজীহুদ্দীন সেখান থেকে ফিরে আসার পর পুরো ঘটনা যখন শায়খ আলী মুত্তাকী হিন্দী জানতে পারেন তখন তিনি শায়খ ওয়াজীহুদ্দীনের বাড়ীতে উপস্থিত হন এবং তাকে এরূপ জিজ্ঞেস করেন, “তুমি কেন বিদ’আতের প্রচলনে সম্মতি দিলে ? তুমি কি শরীয়াতের পথে বাধা দিতে চাও ?” জবাবে শায়খ ওয়াজীহুদ্দীন ইরশাদ করলেন, “নিঃসন্দেহে তিনি সাহিবে ক্বাল এবং সাহিবে হাল , আমাদের এ ক্ষুদ্র ও অক্ষম বোধশক্তি তাঁর জ্ঞানের পূর্নাঙ্গতা পর্যন্ত পৌছাতে অপারগ, এবং শরীয়তের বাহ্যিক দৃষ্টিতেও তাঁর ওপর কোন প্রকার শাস্তির হুকুম আরোপিত হয়না।“ শায়খ ওয়াজীহুদ্দিনের এহেন সিদ্ধান্তের পর গুজরাতের শাসকসমাজ শায়খ মুহাম্মাদ গাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর অনুসারীতে পরিণত হন, এবং এমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে এ কঠিন পরীক্ষা হতে নাজাত দেন।

শায়খের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও শায়খের গুজরাত ত্যাগঃ- মুল্লা আব্দুল কাদির বাদায়ুনী উল্লেখ করেন, একদা সম্রাট আকবর শায়খের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে আসেন এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শনমূলক সাক্ষাৎ করে দরবার হতে বিদায় নেন, শায়খ গাদায়ী নামক এক ধর্মীয় পন্ডিত, যিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সম্রাট আকবরের আগমনকে গ্রহণ করে নিতে পারেননি যার ফলস্বরূপ কপটতা ও হীণমন্যতার শিকার হয়ে তিনি ব্যাপকভাবে শায়খের বিরুদ্ধাচরণ আরম্ভ করেন, বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মজলিস আয়োজন করে শায়খ মুহাম্মাদ গাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর “মেরাজনামা” নামক বইটি সামনে রেখে সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের এ কথা বিশ্বাস করাতে তৎপর হয়ে ওঠেন যে, শায়খ উক্ত গ্রন্থে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া মেরাজের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন পাশাপাশি তিনি জাগ্রত অবস্থায় মেরাজ লাভ করেছেন বলে দ্বাবী করছেন, এবং নাউযুবিল্লাহ, এ কথার দ্বারা তিনি রাসুলে কারীম রাউফুর রহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছেন। এরূপ উদ্দেশ্যপ্রণোদীত ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অবগত হয়ে শায়খ অত্যন্ত মর্মাহত হলেন, এবং গুজরাত ত্যাগ করে গাওয়ালয়ার এর জন্য রওয়ানা হলেন, সেখানে পৌছে তাবলীগ ও হিদায়াতের কাজ আত্মনিয়োগ করলেন।

সন্তানবৃন্দঃ- হযরত শায়খ মুহাম্মাদ গাউস গাওয়ালয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি চারটি বিবাহ করেন এবং ১৪ জন সন্তানের অধিকারী ছিলেন , তন্মধ্যে ৯ জন ছেলে ও ৫ জন মেয়ে। ইনাদের মধ্য হতে সকলেই নিজ নিজ সময়ের প্রসিদ্ধ ও কামিল বুযুর্গ ছিলেন। তবে শায়খ যিয়াউল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক অনন্য মর্যাদার অধিকারী ছিলেন , যিনি সুলূক ও তরিকতের পথের এক মহান আরিফ ছিলেন, নিজের যুগের মহান সুফী ও আলিম ছিলেন। শায়খ যিয়াউল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে ঐতিহাসিক মুল্লা আব্দুল কাদির বাদায়ুনীর দু বার সাক্ষাৎ হয়েছিল, এবং শায়খ যিয়াউল্লাহর ব্যাপারে মুল্লা আব্দুল কাদির বাদায়ুনী বলেন, “শায়খ যিয়াউল্লাহ ছিলেন শায়খ মুহাম্মাদ গাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর স্থলাভিষিক্ত সাজ্জাদানাশীন, সুফিয়ায়ে কিরামের মাঝে খুব কম লোকই তাঁর মত মর্যাদা হাসিল করেছিলেন, তাঁর মজলিসসমূহে সর্বদা মা’রিফাত ও হাকিকাত এর আলোচনা হতো, এবং এ সকল আলোচনার বিষয়বস্তু সর্বদা তাওহীদ বা আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদ থাকতো। তিনি একজন উচ্চমানের হাফিযে কুর’আন ছিলেন এবং যখন পবিত্র কুর’আন মাজীদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতেন তখন কোন প্রকার তাফসীর গ্রন্থের সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন হত না।

শায়খের রচনাবলীঃ- মুফতী গুলাম সারওয়ার লাহোরী তাঁর “খাযিনাতুল আসফিয়া”তে উল্লেখ করেন, “হযরত শায়খ মুহাম্মাদ গাউস রহমাতুল্লাহি আলাইহি অসংখ্য কিতাবের রচয়িতা ছিলেন, তাঁর কিতাবসমূহের মাঝে” জাওয়াহিরে খাম্‌সা”, “আওরাদে গাওসিয়্যাহ”, ও” বাহরুল হায়াত” সর্বাধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে, এ ছাড়াও “যামাইর”, “বাসাইর”,” কেলিদে মাখাযিন”, “কান্‌যুল ওয়াহ্দাত”,” মেরাজনামা”, “জাওয়াহিরে সাব্আ”,” রিসালা সাগীর”, “শার্‌হে নুর নামাহ”, “রাফিউদ দারাজাত”, ” সাবীলুল মুস্তাহিক্বীন ওয়াল মাজ্‌যুবীন”, “হুস্‌নুল আখলাক্ব” কিতাবসমূহকেও তাঁর প্রতি সম্পৃক্ত করা হয়।

শায়খের উপদেশ সমূহঃ-

১. সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করো।
২. এ পরিমাণ ইল্‌ম হাসিল করো, যাতে তোমার ধর্মের সত্যতা তোমার সামনে
প্রমাণিত হয়ে যায়।
৩. প্রতিটি কাজকে সুন্নাতের আলোকে সাজিয়ে নাও।
৪. অজ্ঞদের সঙ্গ ত্যাগ কর।
৫. আদবকে নিজের প্রাত্যহিক জীবনে অভ্যাসে পরিণত কর।
৬. নিজের ইহকাল ও পরকালের সিদ্ধান্তসমূহ আল্লাহর প্রতি সোপর্দ কর।
৭. স্বীয় শায়খ বা মুর্শিদের নির্দেশনা সমুহ পালন কর।
৮. আর যদি শায়খ বা মুর্শিদের বাই’আত না হয়ে থাক তবে শায়খ শারফুদ্দীন
ইয়াহ্‌য়া মানেঈরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মাকতুবাত শরীফ অধ্যয়ন
করতে থাক ।

ওয়াফাতঃ- হযরত গাউসুল আলম শায়খ মুহাম্মাদ গাউস গাওয়ালয়ারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বপরিবারে গাওয়ালয়ারে আগমনের পর একটি খানক্বাহ নির্মাণ করেন, “গওসপুরা” নামে যার নামকরণ করা হয়, তাঁর উপমাহীন সদাচরণ ও নম্রতায় আকৃষ্ট হয়ে অগণিত লোক তাঁর পবিত্র হাতে হাত রেখে ইসলাম গ্রহণ করেন, তাঁর খানক্বাহ শরীফে নিয়মিত মাহ্ফিলে সেমা এর আয়োজন করা হত এবং নিতান্ত রূহানী ও পবিত্র পরিবেশে মা’রিফাত ও হাকিকাত এর গযলসমূহ পরিবেশন করা হত। বিলায়াত সাম্রাজ্যের এই মহান সম্রাট ৯৭০ হিজরীর ১৪ রমজান মোতাবেক ১৫৬৩ ইং সালের ০৬ মে ৬৩ বছর বয়সে ” আকবারাবাদ” নামক স্থানে পরম করুণাময়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহকালীন জীবন ত্যাগ করেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। ইন্তিকালের পর শায়খের দেহ মুবারক গাওয়ালয়ারে এনে দাফন করা হয়। তাঁর আস্তানা আজও অসহায়দের সহায় হয়ে খেদমত করে যাচ্ছে।

 



Mazar of Shah Muhammad Gaus Gwaliori (ra) at Gwalior, Madhya Pardesh, India


Written By Syed Arbaz Shahbazi
 

This site is dedicated to Dr. Syed Khalilullah
A wonderful man who believed in the future of Shahbaz Center and donated it's land.

 home  |  articles  |  who we are  |  Q & A on sufism  |  common misconceptions in islam  |  articles on extremism
hadith  |  ways of the path  |  links  |  guest book  |  favorite CDs  |  contact us

Facebook

Copyright © 2006-2021 Shahbaz Center for Knowledge & Peace. All rights reserved.